চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫৭ শতাংশেরই মুনাফা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ডলার সংকটের কারণে দেশে আমদানি কমে গেছে। যে কারণে আমদানিতে বড় পতন হয়েছে। এতেই পতনে হয়েছে অধিকাংশ বিমা কোম্পানির মুনাফায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাহাজে পরিবহন হওয়া আমদানি-রপ্তানি পণ্য বিমার আওতায় থাকে। এই থেকে বিমা কোম্পানিগুলোর যে আয় হয়, তা ‘মেরিন ব্যবসা’ নামে পরিচিত। যেখান থেকে বিমা কোম্পানিগুলোর আয়ের বড় অংশ আসে। ডলারের সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় সেই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৪২টি। ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৪টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুনাফা কমেছে, যা মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৫৭.৭১ শতাংশ। বিপরীতে বেড়েছে কেবল ১৭টি কোম্পানির মুনাফা।
সিংহভাগ বিমা কোম্পানির মুনাফা কমার পেছনে তিন কারণের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো ডলারের সংকটে আমদানি হ্রাস, শেয়ারবাজার থেকে ভালো রিটার্ন না পাওয়া এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি।
কোম্পানিগুলোর মুনাফার চিত্র বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফা হ্রাসের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রভাতী ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটির আয় কমেছে ৮৯ পয়সা বা ৪৬ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ মুনাফা কমেছে সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের।
এছাড়া ৩০ শতাংশের নিচে ও ২০ শতাংশের ওপরে মুনাফা কমেছে আরও ৯টি কোম্পানির। ১২ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা কমেছে ৬টির, আর ১০ শতাংশের নিচে মুনাফা কমেছে আরও ৬টি বিমা কোম্পানির।
মুনাফা হ্রাসের তালিকায় সবার নিচে রয়েছে তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে ১ শতাংশ। একমাত্র কোম্পানি হিসেবে ফেডারেল ইনস্যুরেন্সের মুনাফা অপরিবর্তিত ছিল।
আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিমা কোম্পানির মুনাফা কমার ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা ও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়াকেও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা।
এর মধ্যে হাতেগোনা কিছু কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। এদের কয়েকটি ভালো মুনাফা করলেও ১০টি কোম্পানি মুনাফা করেছে মাত্র ১ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে বিমা কোম্পানিগুলোর সামনে ভালো সময় অপেক্ষা করছে। যানবাহনে বিমা করার বাধ্যবাধকতা হয়তো এই বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হবে। অন্যদিকে, সরকারি বেসরকারি ভবনে বিমা করার বাধ্যবাধতার আইন পাশ হয়েছে। নানা কারণে তা স্থগিত রয়েছে। এটিরও বাস্তবায়ন হয়তো চলতি বছরের মধ্যে শুরু হবে। তখন বিমা কোম্পানিগুলো নতুন দিগন্তে হাঁটতে শুরু করবে-এমনটাই প্রত্যাশা এখাতের বিনিয়োগকারীদের।