করোনার প্রভাবে কর্মহীনদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এতে ২ লাখ কর্মহীন বেকার স্বল্পসুদ ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পাবেন।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন, আবার অনেকেই কাজ হারিয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছেন-এই কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে নতুন করে কাজে ফিরিয়ে আনতেই এ উদ্যোগ। রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি বিশেষ ব্যাংক ও একটি সংস্থার মাধ্যমে প্যাকেজের অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্যাকেজের এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, প্যাকেজের অর্থ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ব্যাংক আড়াইশ কোটি টাকা করে বিতরণ করবে। এতে তিনটি ব্যাংক দেবে ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি আড়াইশ কোটি টাকা দেয়া হবে পিকেএসএফের মাধ্যমে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রথম এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ যেভাবে বণ্টন করা হয়েছে, বাকি এক হাজার কোটি টাকাও সেই হারেই নির্ধারিত ব্যাংক ও সংস্থাকে দেয়া হবে। শিগগিরই প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তি এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে।
জানা গেছে, এই প্যাকেজের সুদের হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ। আর ঋণের সীমা ৪০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি ব্যাংকের সুদহার অভিন্ন রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্য অড়াইশ কোটি টাকা বিতরণ করা হচ্ছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে। মূলত তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সহজ শর্তে এ টাকা থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে।
এজন্য পিকেএসএফের বোর্ড সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা পাবেন। তিনি আরও বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রয়োজনী অর্থ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাচ্ছে না। এখন তাদের পিকেএসএফ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করবে যাতে সে নতুন করে দাঁড়াতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়াইশ কোটি কোটি টাকা দেয়া হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককে। এই ব্যাংক তাদের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের মধ্যে স্বল্পসুদে ঋণদান কর্মসূচি চালু করছে। অর্থ বিতরণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এই ব্যাংক ৭০ হাজার কর্মহীনদের মধ্যে এই অর্থ বিতরণ করবে।
জানতে চাইলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আশা করছি নভেম্বরের মধ্যে প্যাকেজের আড়াইশ কোটি টাকা বিতরণ করতে পারব। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে যারা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মূলধন পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে, তাদের এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঋণের সুদহার ৫ শতাংশ।
জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৫ শতাংশ, শিল্প খাতে ৩৪ শতাংশ ও সেবা খাত ৫১ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ বড় ধরনের ক্ষতি করেছে গ্রামীণ অর্থনীতির। বন্ধ হয়ে গেছে ক্ষুদ্র উৎপাদনমুখী অনেক প্রতিষ্ঠান। মূলধন শেষ হয়ে গেছে অনেক উদ্যোক্তার। এতে বাড়ছে বেকারত্ব। কমছে লোকজনের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা।
এদিকে করোনার বিরূপ প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন সংস্থার (বিআইডিএস) সমীক্ষায় দেখা গেছে, এরই মধ্যে চাকরিচ্যুত, পুঁজি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১৩ শতাংশ লোক। তারা নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। ন্যূনতম আশ্রয়টা পাওয়া যাবে এই চিন্তায় তারা গ্রামে ফিরে গেছেন। এই প্রেক্ষাপটেই গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বটা সরকারের সামনে এসেছে।
এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। এর মধ্যে করোনায় প্রায় ২০ লাখের মতো কর্মী নানা সংকটে আছেন। বিদেশ থেকে অনেক লোক ইতোমধ্যে ফেরত এসেছেন। তাদের অনেকেই আর কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।
এসব প্রবাসীর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে প্যাকেজের ২৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এ অর্থ দিয়ে ফেরত আসা প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ দেবে ব্যাংকটি। প্রায় ৩০ হাজার কর্মহীনকে এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহতাব জাবিন যুগান্তরকে বলেন, প্যাকেজের আড়াইশ কোটি টাকা থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৭ শতাংশ ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ হারে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে।