শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাষ্টিজের শেয়ার দাম সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৭ টাকা থেকে ৩৩ টাকায় বা ৫ গুণ বৃদ্ধি পারওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঘুম ভেঙ্গেছে।
মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে তুমুল আলোচনায় থাকা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সম্প্রতি শেয়ারবাজারে এমন কারসাজি চক্রের উপদ্রব বেশি মাত্রায় বেড়েছে। কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ থাকা খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের (কেপিপিএল) শেয়ার নিয়েও কারসাজি চক্র নতুন করে তৎপরতা চালাচ্ছে। শেয়ারটির দাম যখন বিনা কারণে বাড়ছিল, তখন শেয়ারনিউজ-সহ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কারসাজির অভিযোগ তুলে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। শেয়ারটির দাম যখন ৭ টাকা থেকে ৩৩ টাকা বা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনই তাদের ঘুম ভেঙ্গেছে।
খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার নিয়ে গতবছরও বড় কারসাজি হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা সম্পৃক্ত থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। এবার নতুন করে কারসাজি শুরু হয়েছে। এবারের কারসাজিতে নতুন চক্র যুক্ত হয়েছে বলে বাজার গুজব রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের পর থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি কোন বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছে না। শেয়ারহোল্ডারদের কোন ডিভিডেন্ডও দিচ্ছে না। আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের অন্ধকারে রেখেছে। তবুও উৎপাদন বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দামে চলছে তেলেসমাতি কান্ড। কারসাজির মাধ্যমে মাত্র ৩০ কর্মদিবসে ৭ টাকার শেয়ার ৩৩ টাকায় তোলা হয়েছে।
গত বছর ২০২৪ সালেও কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দর বৃদ্ধি করে সিন্ডিকেট চক্র। সেই সময় লোকসানি কোম্পানিটির দাম ৫৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ায় কারসাজি চক্র। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ করে বিপুল মুনাফা লুটে নেয় তারা। এবারও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারায় মেতেছে সেই কারসাজিকারী চক্র।
২০১৪ সালে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির মোট ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার রয়েছে। অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৯.৭৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১.১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৫৯.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর খুলনা প্রিন্টিংয়ের দাম ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। যা সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ২০ পয়সায়। মাত্র ৩০ কর্মদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২৬ টাকা বা ৩৬১ শতাংশ। উৎপাদন বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজি ছাড়া এভাবে বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব বলে মনে করছে বাজার বিশ্লেষকরা।