1. [email protected] : শেয়ারখবর : শেয়ারখবর
  2. [email protected] : Admin : Admin
  3. [email protected] : nayan : nayan
  4. [email protected] : news uploder : news uploder
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

জালিয়াতির শাস্তি প্রদানে আসল জায়গায় হাত দিচ্ছে না কমিশন

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০
BSEC-

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির জালিয়াতির জন্য সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু ওই জালিয়াতি খুজেঁ বের করার জন্য যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তা আড়াঁল করেছে।

এমনকি কোম্পানির জালিয়াতির রিপোর্টকেও তারা সঠিক বলে উপস্থাপন করেছে। তারপরেও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনেনি বিএসইসি। অথচ এই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা আনতে পারলেই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আর কোন বাধাই বাধা হয়ে দাড়াঁতে পারবে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছামতো আর্থিক হিসাব তৈরী করে এবং নিরীক্ষক সেটাকেই সঠিক বলে প্রতিবেদন দেয়। যা এ বাজারের সবাই বিশ্বাস করে। এমনকি নিরীক্ষকরাই মালিকদেরকে জালিয়াতির উপায় দেখিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।

এ কারনেই নিরীক্ষার মান উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিনের। যা সমাধানে কোম্পানির সবসময় প্রকৃত চিত্র দেখা যাবে। এতে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত হওয়ার বড় রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া কারসাজির আর্থিক হিসাব নিয়ে শেয়ারবাজারে আসার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর দূর্বল আইপিও নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে না। এতে দূর্ণাম থেকে রেহাই পাবে বিএসইসি।পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট ফির বাহিরে স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে কোম্পানির পরিচালকদের অন্যায়কে আড়াঁল করে। এমনকি তারা অন্যায় করার বুদ্ধিও দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ কোম্পানিতে যেভাবে নিরীক্ষা করা হয়, এতে নিরীক্ষক থাকা আর না থাকা সমান কথা। এই সমস্যাটি সমাধান করা গেলে পুঁজিবাজার অনেক এগিয়ে যাবে।গত ১৬ জুলাই আইপিও অর্থ ব্যবহার না করে জাল ব্যাংক বিবরনী দেওয়ায় কাট্টালি টেক্সটাইলের পরিচালকদেরকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ প্রদানের বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন না নেওয়ায় এমআই সিমিন্টের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত) গত ২৩ জুন ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে।

কোম্পানি দুটিতে এমন জালিয়াতি হলেও নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে এমন কিছুই জানাননি। এমনকি কোম্পানির প্রদানকৃত তথ্য সঠিক বলে তারা জানিয়েছেন।এককথায় কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের তৈরীকৃত আর্থিক হিসাবে সত্যতা যাছাইয়ের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন অসঙ্গতি পেলে নিরীক্ষক তার নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তুলে ধরবে। এই কাজটির জন্য নিরীক্ষককে ফি দেওয়া হয়। যারা স্টেকহোল্ডারদের আস্থার বড় জায়গা। কিন্তু কাট্টালি টেক্সটাইল ও এমআই সিমেন্টের অসঙ্গতি নিয়ে জরিমানা করা হলেও নিরীক্ষককে তার বাহিরে রাখা হয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষক ওই অনিয়ম নিয়ে কোন প্রতিবেদন দেননি। যার দায় নিরীক্ষক কোনভাবেই এড়াতে পারে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের সঠিক সত্যায়িত আর্থিক হিসাবের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা যেনো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ব্যাংক ঋণ দিতে পারে, কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে ইত্যাদি কাজের জন্যই তাদের এই নিয়োগ।

যদি তারা সঠিকভাবে সত্যায়িত না করে কোম্পানির অনিয়মকেও সঠিক বলে চালিয়ে দেয়, তাহলে নিরীক্ষক নিয়োগের দরকার কি। অন্যায়কে সঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তাদেরকে লাখ লাখ টাকা ফি দেওয়া হয় না।বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কাট্টালি টেক্সটাইল শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা যথাযথ ব্যবহার না করে কমিশনে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে। এ সংক্রান্ত জাল ব্যাংক বিবরনী কমিশনে দাখিলের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৮ লংঘন করেছে। এজন্য কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ১ কোটি টাকা ও অন্যসব পরিচালকদেরকে (স্বতন্ত্র ও মনোনিত পরিচালক ব্যতিত) ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে কমিশন।

কাট্টালি টেক্সটাইল জাল ব্যাংক বিবরনী দিলেও কোম্পানিটির আইপিও ফান্ড ব্যবহারে নিরীক্ষক মাহফিল হক অ্যান্ড কোং এর সত্যায়িত প্রতিবেদনে এমন তথ্য নেই। বরং নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাট্টালি টেক্সটাইল প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত উদ্দেশ্যে আইপিও অর্থ ব্যবহার করেছে ও বিএসইসির আইপিও সম্মতির শর্ত অনুযায়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্টের সঙ্গে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস/পেপারস/ভাউচার যাছাই করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।অন্যদিকে এমআই সিমেন্ট নিয়ে বিএসইসি জানায়, কোম্পানির ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উইথ দ্যা সিস্টার কনসার্ন’ হিসাব শিরোনামে ৭০.৪০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।

যা প্রকৃতপক্ষে ইস্যুয়ার কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ হিসেবে প্রদত্ত হয়েছে এবং উক্ত ঋণ প্রদানের পূর্বে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন নেয়া হয়নি। এছাড়াও কোম্পানির পূর্ববর্তী বছরসমূহের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও বর্ণিত শিরোনামে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া যায়। উক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যুয়ার কোম্পানির পরিচালকদের শতভাগ মালিকানাধীন বলে প্রতীয়মান হয়। বর্ণিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ইস্যুয়ার কোম্পানি এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড কমিশনের প্রজ্ঞাপন নং এসইসি/সিএমএমআরআরসিডি/২০০৬-১৫৯/অ্যাডমিন/০২-১০, ডেটেড ১০/০৯/২০০৬ লংঘন করেছে।

যে কারনে প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত) ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন না নিয়েই পরিচালকদের নিজেদের কোম্পানিতে বিনাসুদে টাকা দিলেও এমআই সিমেন্টের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ সংক্রান্ত কোন তথ্য তুলে ধরেননি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং। তারপরেও সব তথ্য ও ব্যাখ্যার ভিত্তিতে অডিট রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।এমআই সিমেন্টে এই অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও কোন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানই তা নিয়ে কিছু জানায়নি।

এমআই সিমেন্টের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব সাইফুল সামসুল আলম অ্যান্ড কোং, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আর্থিক হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং, ২০১২-১৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং ও ২০১০-১১ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব একনবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু কারও নিরীক্ষাতেই ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসেনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ