দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুল আলোচিত-সমালোচিত কোম্পানি সোনালী পেপারের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করতে ফের কারসাজি শুরু করেছে চিহ্নিত একটি চক্র। আগের কায়দার চক্রটি আবারও কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। যে কারণে আগের দিন (সোমবার) কোম্পানিটির শেয়ার ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ দরে ক্রেতাশুন্য করা হয়। আজ নেতিবাচক বাজারেও শেয়ারটির দর ৪৩ টাকা বাড়িয়ে প্রায় ক্রেতাশুন্য করা হয়। তারপর চক্রটি শেয়ার সেল প্রেসারে শেয়ারটির দর নেমে যায়। শেষ বেলায় আগের দিনের থেকে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে শেয়ারটি লেনদেন হয়।
কারসাজির কারণে সোনালী পেপারের শেয়ার দর এমনিতেই অতি মূল্যায়িত। যার ফ্লোর প্রাইস ৬২০ টাকা ১০ পয়সা। গত এক বছরে বেশিরভাগ সময়ই শেয়ারটি ছিল ফ্লোর প্রাইসে। গত দুই দিনে শেয়ারটি ৮৯ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে আজ ৭০৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়। তবে দিনশেষে ক্লোজিং দর হয় ৬৮৪ টাকা ২০ পয়সায়।
সোনালী পেপারের গত দুই বছরের শেয়ার দরের চিত্র
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার কিছুটা অস্থির হলেই কোম্পানিটির কারসাজিকারীরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। পতনের ধাক্কায় তখন বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে, তখনই সুযোগটি নেয় সোনালী পেপারের চতুর কারসাজিকারীরা। তারপর টানাটানি করে শেয়ারটির দাম ২০-৩০ শতাংশ বাড়িয়ে চড়া দামে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ২-৪ দিন পর শেয়ারটি ফের ফ্লোর প্রাইসে ফিরে আসে। এরপর চক্রটি কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকে। শেয়ারটি যখন ফ্লোর প্রাইসে বা ফ্লোর প্রাইসের কিনারায় অনেক দিন লেনদেন হয়, বিনিয়োগকারীরা তখন অধৈর্য হয়ে শেয়ারটি লোকসানে ছেড়ে দেয়। তখন চক্রটি ওইসব শেয়ার তুলে নেয়। তারপর কিছু দিন পর আবারও টানাটানি দৃশ্যের অবতারণা। এভাবেই শেয়ারটির লেনদেনে দেখা যায় ‘টম অ্যান্ড জেরি’র চক্রাকার খেলা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে। ০৮ ফেব্রুয়ারি ফ্লোর প্রাইস ভেদ করে প্রথম লেনদেন হয়। তারপর ১৪ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির দর ৭২০ টাকায় তোলা হয়। ওইদিন ক্লোজিং প্রাইস হয় ৭০২ টাকা ৭০ পয়সায়। তারপর ২০ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪ কর্মদিবসের মাথায় (দুই দিন ছুটি বাদে) শেয়ারটি ফের ফ্লোর প্রাইসে স্থান নেয়।
তারপর ২৭ ফেব্রুয়ারি ফ্লোর প্রাইস টপকে শেয়ারটি আবারও লেনদেন হয়। এবার বেশি দুর এগুতে পারেনি। দুই দিনের মাথায় ফের ফ্লোর প্রাইসে ফিরে আসে।
তারপর ০৩ মার্চ শেয়ারটি আবারও ফ্লোর প্রাইস ভেঙ্গে ওপরে ওঠে। এবার শেয়ারটি বেশ অনেক দুর যায়। ২২ মার্চ শেয়ারটি ৭১০ টাকায় ওঠে। যদিও ওইদিন শেয়ারটি ক্লোজিং দর হয় ৬৯১ টাকা ২০ পয়সায়। তারপর থেকে পতনের বৃত্তে থাকে শেয়ারটি। কিছু টানাটানির পর ১০ এপ্রিল আবার শেয়ারটির স্থান হয় ফ্লোর প্রাইসে।
তারপরও দুই একবার শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইস ভেদ করে লেনদেন করানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু সফল হয়নি। তারপর ২০ মার্চ থেকে শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইসে ঘুমাতে থাকে। দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস পর গত ০৭ আগস্ট শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইস ভেদ করে ওপরে ওঠে। ৬ দিনের মাথায় শেয়ারটি ৭৬০ টাকায় তোলা হয়। তারপর দুই দিনের মাথায় ১৬ আগস্ট ফের ফ্লোর প্রাইসে স্থান নেয় শেয়ারটি।
কয়েক দিন বিরতি দিয়ে গতকাল সোমবার ফ্লোর প্রাইস থেকে উঠেই ক্রেতা সংকটের ঝলক দেখায় শেয়ারটি। আজও দিনের শুরুতে সেই ঝলক অব্যাহত থাকে। কিন্তু শেষ ভাগে আগের কায়দায় বিক্রির ধুম নামে। এরমধ্যে ছড়ানো হয় চেনা কায়দার নানা রকম গুজব। বিনিয়োগকারীদের কতল করার অভিন্ন অপকৌশল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি মূল্যায়িত শেয়ারটি থেকে বিনিয়োগকারীদের যোজন যোজন দুরে থাকা উচিত। কারণ শেয়ারটির লেনদেন কোনো ভাবেই স্বাভাবিব নয়। এটি শেয়ারবাজারে কারসাজির অন্যতম শীর্ষ শেয়ার। যে শেয়ারে বর্তমানে দরে বিনিয়োগ করলে লোকসান ছাড়া লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
উল্লেখ্য, সোনালী পেপার ৩০ জুন, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২২) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু পরের দুই প্রান্তিক তথা দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২২) এবং তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ’২৩)-এর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এর সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন বিষয়ে অন্ধকারে রেখেছে। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে আলোচিত এক বিনিয়োগকারী মাতামাতি করছে।