বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একটি বাদে বাকী পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে বাজার মূলধন পরিমান। কোম্পানিরগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান ৩ দশমিক ১৯ গুন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৮৪ গুন।
এদিকে গেল সপ্তাহে শেষ দুইদিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) লেনদেনে চমক দেখিয়েছে সিএসই। গতকাল বৃহস্পতিবার সিএসইর লেনদেন ৩শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করেছিল। আগেরদিন বুধবার লেনদেন ৫শ কোটি টাকার ঘরে ছিল। তবে আগের তিন কার্যদিবস (রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার) লেনদেন ১২ থেকে ২০ কোটি টাকার ঘরে গড়াগড়ি করছিল। সেখান থেকে হঠাৎ করেই শেয দুই কার্যদিবস লেনদেন ৫শ ও ৩শ কোটি টাকা, এটা রীতিমত চমক। তবে এ ধরনের অতি বাড়তি লেনদেনের কোন ব্যাখা দেয়নি সিএসইর কর্তৃপক্ষ।
সিএসইর সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৬ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৮৯৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তালিকাভুক্ত ৩১১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১৫টির, দর কমেছে ৩৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০টি কোম্পানির।
সিএসইর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পলিচালক মুঠোফোনে বলেন, গত বুধবার লেনদেন ৫৩০ কোটি টাকা। এটা সিএসইর ইতিহাসের সেরা লেনদেন হিসেবে গন্য। বৃহস্পতিবারও ৩২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। পরপর দুই দিন এতো বেশি লেনদেন হওয়ার কারন আমি বলতে পারবো না। এটা আমার জানা নাই। এটা বলতে পারবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেই জায়গা আমাদের বোর্ডের কেউ হস্তক্ষেপ করে না। তাই লেনদেন প্রসঙ্গে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। আমি সরি চাচ্ছি। আরও বলেন, বিশেষ কারনে এ ধরনের লেনদেন হয়। তবে আমার জানা মতে, সেই ধরনের কোন ঘটনা নেই। তাই দুইদিনের এই লেনদেনের ব্যাখা, আমার কাছে নেই।
লেনদেন প্রসঙ্গে মুঠোফোনে ভিন্ন কথা শুনালেন সিএসইর একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মূলধনের বাজারে ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন, চিন্তাই করা যায় না। এতো কম লেনদেন কারন হিসেবে আমরা পতন বাজারকে দায়ী করে আসছি। আসলে এটা মোটেও ঠিক না। সিএসইর মূলধন হিসেবে লেনদেন ৫শ কোটি টাকার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেখানে লেনদেন হচ্ছে খুবই সামান্য। তবে এটা সত্যিই যে, দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) সিএসইর লেনদেন সীমা দেখে মনে হচ্ছে, লেনদেন স্বাভাবিক আচরন করছে। এটা হওয়া উচিৎ।
সিএসইর সূত্র মতে, গেল সপ্তায় একটি বাদে বাকী পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএএসপিআই দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৫৭ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। সিএসই ৫০ সূচক দশমিক ২০ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ১৫ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১২ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৯০ দশমিক ৭২ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৫৪ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭২ দশমিক ২২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই এসএমইএক্স দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০৩ দশমিক ৭০ পয়েন্টে।
গেল সপ্তায় এ ক্যাটাগরির শতভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। একাই ১৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। এছাড়া ব্যাংক এশিয়ার ১২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের ১১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, বার্জার পেইন্টসের ৭৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর ৪৭ কোটি ৯ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ২০ কোটি ২ লাখ টাকা, এনভয় টেক্সটাইলের ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়াটেকের ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং দি ইবনে সিনা ফার্মার ২২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২০ কোটি ৫ লাখ টাকা শেয়ার। ওইদিন লেনদেনের সেরা দশ প্রতিষ্ঠান ৩০৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছিল। এর মধ্যে লিন্ডে বিডি একাই লেনদেন করেছে ৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার। এছাড়া ব্যাংক এশিয়ার ৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ২৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, ইবনে সিনার ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ২২ কোটি ১ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ১৫ কোটি টাকা, জিপিএইচ ইস্পাতের ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছিল।
গত বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা শেয়ার। ওইদিন লেনদেনের সেরা দশ প্রতিষ্ঠান ৫১২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছিল । এর মধ্যে লিন্ডে বিডি একাই লেনদেন করেছে ৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার। এছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের ৮২ কোটি ৮ লাখ টাকা, বার্জার পেইন্টসের ৭৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ৬৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর ৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, এনভয় টেক্সটাইলের ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়াটেকের ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ২২ কোটি টাকা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৯ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছিল।