আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২ হাজার ২৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা বেড়েছে ১৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। যাতে ব্যাংকগুলোর ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৯৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের।
ব্যাংকগুলোর ২০১৯ সালের সমন্বিত (সাবসিডিয়ারিসহ) আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের ২০১৮ সালের শেষে মোট ২৭ হাজার ৮৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ছিল। যা ২০১৯ সালের শেষে বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ১৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ হিসেবে ১ বছরে বা ২০১৯ সালে পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে বোনাস শেয়ারের কারনে বেড়েছে ২ হাজার ২০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একইভাবে চলতি বছরেও ২০১৯ সালের ব্যবসায় ঘোষিত বোনাস শেয়ারের কারনে পরিশোধিত মূলধন বাড়বে।
২০১৯ সালে পরিশোধিত মূলধনের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ১৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকার মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালের ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার নিট মুনাফা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।
ব্যাংকগুলোর ২০১৯ সালে ৬৯৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা মুনাফা হলেও এরমধ্য থেকে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরন করা হবে ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে মুনাফার ৩২.৫১ শতাংশ বিতরন করা হবে। বাকি ৪ হাজার ৭০১ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা ৬৭.৪৯ শতাংশ ব্যাংকেই থেকে যাবে। যার একটি অংশ বোনাস শেয়ারের জন্য পরিশোধিত মূলধনে ও বাকি অংশ সংরক্ষিত আয়ে (রিটেইন আর্নিংস) যোগ হবে।
দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এরপরে ৪৫৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৩৪ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের।
২০১৯ সালে একমাত্র আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লোকসান করে সবার তলানিতে রয়েছে। ব্যাংকটির ৪২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এরপরে সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে এবি ব্যাংকের। ওই বছরে ব্যাংকটির ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। আর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৫৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা রূপালি ব্যাংকের ও তৃতীয় সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের।
নিম্নে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ তুলে ধরা হল-
ব্যাংকের নাম | মুনাফা-২০১৯ (কোটি টাকা) | মুনাফা-২০১৮ (কোটি টাকা) | পরিশোধিত মূলধন (কোটি টাকা) |
ইসলামী ব্যাংক | ৫৪৭.৪০ | ৬৩১.০৩ | ১৬১০ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৪৫৮.২৬ | ৫৬৭.০১ | ১২৩৩.৩৮ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৪৩৪ | ৪২০.১৪ | ৫০০ |
ন্যাশনাল ব্যাংক | ৪১১.৭৮ | ৩৮৫.৬৭ | ২৯২০.৪০ |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৩৯৯.৪১ | ৩১১.০৮ | ৮১১.৮০ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ৩৩৩.৬০ | ২২৬.৮৯ | ৯২৪.০৯ |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক | ২৮৫.২৫ | ২৬৬ | ১১৫৯.৫৪ |
আইএফআইসি ব্যাংক | ২৮২.৭৪ | ১৬৪.৯৫ | ১৪৭২.৬১ |
দি সিটি ব্যাংক | ২৬৩.২৪ | ২২২.৪৭ | ১০১৬.৩৯ |
যমুনা ব্যাংক | ২৫৩.২৪ | ২২৯.৭১ | ৭৪৯.২৩ |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ২৫০.৫৫ | ২৪৭.৩২ | ১১৫৯.৯৪ |
আল-আরাফাহ ব্যাংক | ২৪২.৮০ | ২৪৪.৯৯ | ১০৬৪.৯০ |
এক্সিম ব্যাংক | ২৩৮.৬৭ | ২৩৩.২৫ | ১৪১২.২৫ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ২২২.২০ | ২৯২.৩০ | ৯৩৭.১৬ |
পূবালি ব্যাংক | ২১৫.৯৪ | ৩৬২.৭০ | ১০২৮.২৯ |
এনসিসি ব্যাংক | ২১৩.৩০ | ১৮২.৫২ | ৯২৭.৩৮ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক | ২০৭ | ১৫৯.০৬ | ৮৬২.৫১ |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ২০৩.৪০ | ১৮৬.৩৮ | ৬১২.৬৬ |
ব্যাংক এশিয়া | ১৯৫.৮৭ | ২২৩.৩৪ | ১১৬৫.৯১ |
উত্তরা ব্যাংক | ১৮৭.৪৬ | ১৬৬.৯৬ | ৪০৮.০৮ |
প্রাইম ব্যাংক | ১৬৬.৯৪ | ২২৫.৩৬ | ১১৩২.২৮ |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১৬৬.১৫ | ১২৪.৬১ | ৯৩৩.৪২ |
ঢাকা ব্যাংক | ১৬২.১১ | ১৪০.৯৬ | ৮৫৩.২১ |
ওয়ান ব্যাংক | ১৬১.০৫ | ১৪০.৯৪ | ৮৪৩.১৯ |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক | ১৫২.৭৬ | ১৬০.১৫ | ৮৯৩.৩৪ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ১৫০.৪২ | ১২৫.৫৬ | ৯৫৮.০৯ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ১৩৩.৭৮ | ১৭৩.৪৪ | ৭০৩.৪৬ |
রূপালি ব্যাংক | ৫৭.১৬ | ৪০.৯৩ | ৪১৪.১৭ |
এবি ব্যাংক | ১২.১৩ | ৪.৩২ | ৭৫৮.১৩ |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক | (৪২.৫৪) | (৪৮.৫৬) | ৬৬৪.৭০ |
মোট-৩০টি ব্যাংক | মোট- ৬৯৬৬.০৭ | মোট- ৬৮১১.৪৮ | মোট- ৩০১৩০.৫১ |
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবীদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একদিকে ব্যাংকগুলো বলছে তাদের তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়েছে। অন্যদিকে মুনাফা বাড়ছে। এখন দেখার বিষয় প্রভিশনিং ঘাটতি ও ট্যাক্স কম দেখানো হয়েছে কিনা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদেরকে শুধু মুনাফা না দেখে, অন্যান্য সূচক (ইন্ডিকেটর) যাছাই করে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও প্রভিশনিং ঘাটতি আছে কিনা, তা দেখতে হবে। শুধুমাত্র একটি ইন্ডিকেটর দেখে বিনিয়োগে যাওয়া উচিত না।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। ব্যাংকটির ২ হাজার ৯২০ কোটি ৪০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। তবে ব্যাংকটি মুনাফার হিসাবে রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ইসলামী ব্যাংক মুনাফায় প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৪৭২ কোটি ৬১ লাখ টাকার তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংক মুনাফায় ৮ম অবস্থানে রয়েছে।
অপরদিকে সবচেয়ে কম ৪০৮ কোটি ৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে উত্তরা ব্যাংক মুনাফায় ২০তম স্থানে রয়েছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৪১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ২৮তম অবস্থানে রয়েছে রূপালি ব্যাংক। এছাড়া তৃতীয় সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ৩য় অবস্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
বর্তমানে ১২টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকার উপরে রয়েছে। ব্যাংকগুলো হল- ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, পূবালি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংক।