শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কড়াকড়িতে গত ৩ বছর ধরে অযৌক্তিক বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রবণতা কমছে। আগে নগদের চেয়ে বোনাস দেওয়ার যে প্রবণতা ছিল, এখন সেটা অনেক তলানিতে। যাতে করে আগের অর্থবছরের থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় বোনাস শেয়ার অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। যা নগদের তুলনায় মাত্র ২.৬৭ শতাংশ।
১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের জন্য উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অযৌক্তিক বোনাস শেয়ারকে দায়ী করা হয়। যেটা নিয়ন্ত্রনে আনতে কমিশনের চেষ্টায় লভ্যাংশের কমপক্ষে অর্ধেক নগদ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরপরেও বোনাস শেয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
দেখা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২২ কোটি ৮৯ লাখ বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের ব্যবসায় ৪৯ কোম্পানির (১ জুলাই-২৬ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে) ছিল ৫০ কোটি ৭৪ লাখ। এ হিসেবে বোনাস শেয়ার কমেছে ২৭ কোটি ৮৫ লাখ বা ৫৫%।
এদিকে নগদ লভ্যাংশের সঙ্গে বোনাস শেয়ারের ব্যবধানও বড় হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২১৫ কোম্পানি থেকে ৮ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করা হয়েছে। সেখানে বোনাস শেয়ারের পরিমাণ ২২ কোটি ৮৯ লাখ বা ২২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার। যা নগদ লভ্যাংশের ২.৬৭ শতাংশ। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরে ছিল ৬%।
২১৫ কোম্পানির ৮৫৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা: চলছে ব্যাংকের পরিবর্তে বিওতে পাঠানোর চেষ্টা
তালিকাভুক্ত ৩৯ কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের (দু-একটি ডিসেম্বরসহ অন্যান্য ক্লোজিং) ব্যবসায় ঘোষিত ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৪টি বোনাস শেয়ার বিএসইসির অনুমোদন ও এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হবে। এতে কোম্পানিগুলোর ২২৮ কোটি ৯৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়বে।
নগদের চেয়ে বেশি বোনাসে অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপের কারনে গত ৩ বছর ধরে বোনাস শেয়ারের পরিমাণ কমে এসেছে। অন্যথায় নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার দিতে গেলেই পুরো বোনাসের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ করারোপের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
এছাড়া অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনও বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এখন কেউ চাইলেই ব্যবসায় সম্প্রসারন ছাড়া বা অযৌক্তিকভাবে বোনাস শেয়ার দিতে পারে না। এমনকি বোনাস শেয়ার দিতে হলে আগে বিএসইসির সম্মতি নিতে হয়। যার ধারাবাহিকতায় কমিশন বে লিজিং ও বেঙ্গল বিস্কুটের বোনাস শেয়ার বাতিল করে দিয়েছে।
তারপরেও ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে ৬টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ৪টি কোম্পানির পর্ষদ নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। ওইসব কোম্পানিগুলোকে বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হবে।
এ বছর বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা ৩৯ কোম্পানির মধ্যে ৩৩টির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ২৯টির পর্ষদই বোনাসের চেয়ে বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর আগের বছর (২০২০-২১) ৪৯ কোম্পানির পর্ষদ ৫০ কোটি ৭৪ লাখ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল। এরমধ্যে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল ৯টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ৩টি কোম্পানির পর্ষদ নগদের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তারপরেও নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার কড়াকড়ি আরোপের কারনে গত ৩ বছর ধরে বোনাস শেয়ার কমে এসেছে। এটা নিসন্দেহে ভালো খবর। তবে যদি যুদ্ধ না থাকত বা স্বাভাবিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতি থাকত, তাহলে বোনাসের পরিমাণ আরও কমে আসতে পারত।
তিনি বলেন, বোনাস শেয়ারের জন্য শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারপরেও চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছরই অনেক কোম্পানির বোনাস শেয়ারের বড় চাপ বাজারে আসত।
গত ১ জুলাই-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ৫ শতাংশ হারে মোট ৪ কোটি ৩ লাখ বোনাস শেয়ার দেওয়া হবে।
এবারও বোনাসে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত। এ কোম্পানিটি থেকে ৫.৫০ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪০ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হবে। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ডরিন পাওয়ার থেকে ১২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৯৪ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হবে।