1. [email protected] : শেয়ারখবর : শেয়ারখবর
  2. [email protected] : Admin : Admin
  3. [email protected] : nayan : nayan
  4. [email protected] : news uploder : news uploder
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বেশি আয় করেছে গ্রামীণফোন

  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Telenor

দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রামীণফোন নামে ব্যবসা করছে টেলিনর। বাংলাদেশে ব্যবসা চালাতে গিয়ে প্রায়ই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় বলে প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও রাজস্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে গ্রামীণফোনের। যদিও টেলিনর নিজেই বলছে, গোটা বিশ্বে টেলিনরের সবচেয়ে বড় গ্রাহকভিত্তি বাংলাদেশেই।

নরডিক অঞ্চলের নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড এবং এশিয়ার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ রয়েছে টেলিনরের। সব মিলিয়ে ২০২০ সাল শেষে টেলিনরের মোট গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ২০ লাখে। এর মধ্যে বাংলাদেশে টেলিনরের মালিকানাধীন গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ। গত বছর বিশ্বব্যাপী টেলিনর মোট ১২ হাজার ২৮১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনারের (গতকালের বিনিময় হার অনুযায়ী ১ ক্রোন=১০ টাকা ৩ পয়সা) ব্যবসা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে নরওয়েতে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৬৩০ কোটি ৭০ লাখ ক্রোনার। ব্যবসার ব্যাপ্তির দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডে গ্রুপটির মালিকানাধীন ডিট্যাক। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির থাইল্যান্ডে মোট ব্যবসার আকার ছিল ২ হাজার ৩৭০ কোটি ৪০ লাখ ক্রোনার। আর এ সময়ে বাংলাদেশে টেলিনরের গ্রামীণফোন ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৫৪৮ কোটি ৩০ লাখ ক্রোনারের (১৫ হাজার ৫২৯ কোটি টাকার বেশি) সমপরিমাণ। এ সময় বিশ্বব্যাপী টেলিনর গ্রুপের মোট কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৪০ লাখ ক্রোনার।

অন্যদিকে এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মোট কর, সুদ, অবচয় ও অবলোপন পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ক্রোনার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইবিআইটিডিএ এসেছে নরওয়ে থেকে, যার পরিমাণ ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৭০ লাখ ক্রোনার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৭৭ কোটি ৬০ লাখ ক্রোনার (৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার বেশি) এসেছে বাংলাদেশ থেকে। থাইল্যান্ডের ডিট্যাক থেকে এ সময়ে ইবিআইটিডিএ এসেছে ৯০৭ কোটি ৬০ লাখ ক্রোনার। এ সময় টেলিনরের ইবিআইটিডিএ মার্জিনের দিক দিয়ে বাংলাদেশই ছিল শীর্ষে, যার হার ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ।

কভিড-১৯-এর কারণে গত বছর গ্রামীণফোনের সার্বিক ব্যবসা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বলে জানালেন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির সিইও ইয়াসির আজমান। তিনি বলেন, মহামারীর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্থনৈতিক গতি প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় তা বছরটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সার্বিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু কভিড-১৯-এর অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান, আমাদের প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দক্ষতা দিয়ে এ মহামারী মোকাবেলায় গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন ও সেবা নিয়ে আসতে আমরা বদ্ধপরিকর।

অন্যদিকে টেলিনর গ্রুপের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৬০ লাখ ক্রোনার। এর মধ্যে নরওয়েতে ২ হাজার ৮৬৫ কোটি ৮০ লাখ, থাইল্যান্ডে ২ হাজার ২৯৯ কোটি ৪৬ লাখ ও বাংলাদেশে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ক্রোনার ব্যবসা করেছে টেলিনর। ২০১৯ সালেও প্রতিষ্ঠানটির ইবিআইটিডিএর উৎস হিসেবে শীর্ষে ছিল নরওয়ে। দেশটিতে টেলিনরের ইবিআইটিডিএর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১১৯ কোটি ৯৯ লাখ ক্রোনার। পরের অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণফোন, যার পরিমাণ ৯৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ক্রোনার (গতকালের বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ)। তৃতীয় স্থানে থাকা থাইল্যান্ডের ডিট্যাকে প্রতিষ্ঠানটির ইবিআইটিডিএ ছিল ৮৮১ কোটি ১৮ লাখ ক্রোনার।

দেশের টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে গবেষণা রয়েছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই)। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান টেলিনরের কার্যক্রম শুরুর দিকে ব্যবসার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং সামাজিক কল্যাণের বিষয়টিই ছিল মুখ্য। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এদেশে করহার তুলনামূলক বেশি হওয়ার পরও টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজার বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক মুনাফার দৃশ্যপটও স্বাভাবিক বলে মনে করছেন তারা।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের বাজারটি তাদের জন্য খুব বড়। প্রথমে যদিও তারা সোস্যাল অবজেকটিভ নিয়ে এদেশে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে তারা এ বাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছে। এখন এ বাজারে তারা মুনাফা করছে, সেটা খুবই ইতিবাচক। টেলিকমের ওপর বাংলাদেশের করহার সবচেয়ে বেশি। তার পরও এখানে বাজারের আকার যথেষ্ট বড় বলেই তারা মুনাফা করতে পারছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকদের যেটা দেখা প্রয়োজন সেটা হলো তাদের সেবার মূল্য ও মান ঠিক আছে কিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সেবা ও সেবার মান উন্নয়নের এখনো অনেক সুযোগ আছে।

লাভজনক হলেও বাংলাদেশেই টেলিনরের লাইসেন্স ও স্পেকট্রামসহ মূলধনি ব্যয় হয়েছে তুলনামূলক কম। এ বাবদ টেলিনরকে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় নরওয়েতে ৬৪৯ কোটি ৫৬ লাখ ক্রোনার। এরপর থাইল্যান্ডে ৪২১ কোটি ৩ লাখ ও পাকিস্তানে ২৪১ কোটি ৬২ লাখ ক্রোনার এ খাতে ব্যয় করতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে মূলধনি খাতে ২০১৯ সালে টেলিনরের ব্যয় হয়েছে ১৯০ কোটি ১৬ লাখ ক্রোনার।

ব্যবসা, ইবিআইটিডিএ কিংবা মূলধনি ব্যয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে না থাকলেও টেলিনরের সবচেয়ে বেশি কর-পূর্ববর্তী মুনাফা আসে বাংলাদেশের গ্রামীণফোন থেকে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ৬৪৫ কোটি ৬৫ লাখ ক্রোনার (প্রায় ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ) কর-পূর্ববর্তী মুনাফা করেছে টেলিনর। এরপর সবচেয়ে বেশি কর-পূর্ববর্তী মুনাফা এসেছে মালয়েশিয়া থেকে ৪৩৪ কোটি ৩৩ লাখ ক্রোনার। এছাড়া নরওয়েতে ৪১১ কোটি ৪ লাখ ও সুইডেনে ৩০৭ কোটি ৯ লাখ ক্রোনার কর-পূর্ববর্তী মুনাফা করেছে টেলিনর। বাংলাদেশে করপোরেট আয়করের হার বেশি হলেও ২০১৯ সালে এ খাতে টেলিনরকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে নরওয়েতে, ৩৭০ কোটি ১৮ লাখ ক্রোনার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কর দিতে হয়েছে বাংলাদেশে, ৩১৪ কোটি ৪৪ লাখ ক্রোনার।

গ্রাহকদের জন্য মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করেই গ্রামীণফোনকে বাংলাদেশের বাজারে অবস্থান ধরে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন মুনাফার লক্ষ্য নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। শুরু থেকেই তারা কিছুটা এগিয়ে থাকতে পেরেছে। সে সময় বেশকিছু সুবিধাও পেয়েছে তারা। তবে গ্রাহকদের দেয়া সেবার মান নিশ্চিত করে মুনাফা অর্জন হলে তা ইতিবাচক। প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার এ বিষয়ে জানিয়েছি আমরা। আগামী দিনগুলোয় মানসম্মত সেবা দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অবস্থান ধরে রাখতে হবে তাদের।

প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। ফলে সেখানকার বাজারে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর জন্য মুনাফা করাও কঠিন। যদিও জনসংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে চীনের পরই টেলিযোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারতে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্নের (আরওই) ভারিত গড় ছিল ঋণাত্মক, ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক, ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশে। একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারিত গড়ে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের নিট মুনাফা মার্জিন ছিল ঋণাত্মক, ২৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সূত্র: বণিকা বার্তা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ