1. [email protected] : শেয়ারখবর : শেয়ারখবর
  2. [email protected] : Admin : Admin
  3. [email protected] : nayan : nayan
  4. [email protected] : news uploder : news uploder
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন

বিনিয়োগকারীদের ১১ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে বিএটিবিসির কাছে

  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২১
bat-copertina

দেশের শেয়ারবাজারে ১৯৭৭ সালে তালিকাভুক্ত হয় তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি)। সুদীর্ঘ ৪৪ বছরে কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় হারে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। এ কারণে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার দরও বেশ চড়া। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২০০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এতে বিএটিবিসির উদ্যোক্তা রেলিগ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডসহ আরো কিছু স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীর কাগুজে শেয়ারের বিপরীতে আট কোটিরও বেশি বোনাস শেয়ার অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড হিসেবে জমা হয়ে আছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এ শেয়ারের মূল্য ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

শুধু বিএটিবিসি নয়; বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা পড়া হিসাব অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের মূল্য ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকা। এর মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ৯৫৬ কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ টাকা। আর স্টক ডিভিডেন্ডের মূল্য ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৬ টাকা।

তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের দিক দিয়ে সবার শীর্ষে রয়েছে বিএটিবিসি। বর্তমানে কোম্পানিটির অপরিশোধিত ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর অপরিশোধিত স্টক ডিভিডেন্ড বা বোনাস শেয়ারের পরিমাণ ৮ কোটি ৯০ হাজার ৮৯৮টি, যার বাজারমূল্য ১১ হাজার ৩৫৯ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৬৩৩ টাকা।

মূলত বিএটিবিসির বিপুল অংকের এ অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড জমা হয়েছে ২০১৮ সালে ২০০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর। স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৬০ কোটি টাকা, আর শেয়ার সংখ্যা ছিল ছয় কোটি। স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পরিশোধিত মূলধন ১৮০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

কোম্পানিটির ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া শেয়ারধারণ তথ্য অনুযায়ী বিএটিবিসির মূল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রেলিগ ইনভেস্টমেন্টের কাছে কোম্পানিটির ৭২.৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া বিদেশী করপোরেট বিনিয়োগকারীর কাছে ১৪.০৩ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ০.৬৪ শতাংশ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কাছে ৫.৮২ শতাংশ, সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে ২.৮২ শতাংশ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) কাছে ০.৩৩ শতাংশ, স্থানীয় করপোরেট বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯.৯৫ শতাংশ এবং বাকি ২.৪৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে। এর মধ্যে রেলিগ ইনভেস্টমেন্টসহ স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ৪৪.৪৯ শতাংশ শেয়ার কাগুজে, যা এখনো ডিম্যাট (ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর) করা হয়নি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএটিবিসিকে কাগুজে শেয়ার ডিম্যাট করার জন্য একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করেনি।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সিকিউরিটিজ আইনানুসারে শেয়ার ডিম্যাট না করে স্টক ডিভিডেন্ড নিতে পারবে না। যতদিন শেয়ার ডিম্যাট না হচ্ছে, ততদিন এ ধরনের ডিভিডেন্ড কোম্পানির সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে। কমিশন সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। এখন থেকে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের বিষয়টি এ গাইডলাইন অনুসারে নিষ্পত্তি হবে। আর বর্তমানে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে শেয়ার ডিম্যাট করেই লেনদেনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অবশ্য শেয়ার ডিম্যাট না করার কারণে বিএটিবিসির অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত থাকার বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন খোদ কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, হয়তো কোম্পানির কর-সংক্রান্ত কোনো ইস্যু থাকতে পারে, যার কারণে তারা শেয়ারগুলোকে ডিম্যাট করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার শেয়ারগুলো ডিম্যাট করা হলে সেগুলো সহজে লেনদেনযোগ্য শেয়ারে পরিণত হবে। এতে করে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের সরবরাহ বেড়ে যেতে পারে এবং এর প্রভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমারও আশঙ্কা রয়েছে। এটিও একটি কারণ হতে পারে শেয়ার ডিম্যাট না করার। তা নাহলে বিএটিবিসির মতো একটি কোম্পানি যারা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সবসময়ই অগ্রগামী, সেই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা কেন এ যুগে এসেও কাগুজে শেয়ার নিয়ে বসে থাকবেন, সেটি বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে বিএটিবিসির কোম্পানি সচিব ও হেড অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স মো. আজিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কোম্পানি আইন ও সিকিউরিটিজ আইন মেনেই এতদিন পর্যন্ত অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের বিষয়টি মেইনটেইন করা হয়েছে। কোনো শেয়ারহোল্ডার যদি স্বেচ্ছায় কাগুজে শেয়ারকে ডিম্যাট না করেন, তাহলে তো আর আমরা জোর করতে পারি না। আর আইনে কাগুজে শেয়ার রাখা যাবে না এ কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে লেনদেন করতে হলে কাগুজে শেয়ারকে ডিম্যাট করতে হবে। তবে এখন যেহেতু বিএসইসি এ বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করেছে, সেহেতু তিন বছরের মধ্যে শেয়ার ডিম্যাট করার জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ওপর চাপ তৈরি হবে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসারেই কেবল অপরিশোধিত ক্যাশ ডিভিডেন্ডের তথ্য আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড থাকার বিষয়টি নিয়ে সবাই অবগত থাকলেও এর প্রকৃত পরিমাণ কত, সে সম্পর্কে আগে কোনো ধারণা ছিল না নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জ কারোরই। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে পুঞ্জীভূত এ অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ নির্ণয়ের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এজন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের তথ্য তলব করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত বেশকিছু কোম্পানি এ তথ্য দেয়নি। তাছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছে কী পরিমাণ অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড রয়েছে, সে তথ্যও এখনো জানা যায়নি। অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের যতটুকু তথ্য কমিশন পেয়েছে, তাতেই তা অবাক করার মতোই। কমিশনের পর্যবেক্ষণ, ক্যাশ ডিভিডেন্ডের অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে। আর বিপুল পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ডগুলো অপরিশোধিত থাকায় পুঁজিবাজারে এগুলো লেনদেন হয়নি। এতে বাজারে শেয়ারের প্রবাহও কমে গেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো সুকৌশলে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ডের তথ্যটি গোপন করে এসেছে।

কমিশন সূত্র বলছে, বিষয়টি নজরে আসার পর তারা এর পরিমাণ নির্ণয়ের পাশপাশি এ-সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি করেছে কমিশন। প্রকৃত বিনিয়োগকারী কর্তৃক ক্যাশ কিংবা স্টক ডিভিডেন্ড দাবি করার আগ পর্যন্ত একটি বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে এটি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় ব্যবহার করা হবে। এর ফলে এখন থেকে অপরিশোধিত ডিভিডেন্ড নিয়ে সব ধরনের অস্বচ্ছতা, তথ্য গোপন এবং অনিয়ম বন্ধ হবে বলে মনে করছে কমিশন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ