1. [email protected] : শেয়ারখবর : শেয়ারখবর
  2. [email protected] : Admin : Admin
  3. [email protected] : nayan : nayan
  4. [email protected] : news uploder : news uploder
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অযোগ্যতায় কাল হয়ে দাড়িঁয়েছে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০
stock-market-

শেয়ারবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারনে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হলেও তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। শেয়ারবাজারের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ইস্যুয়ার কোম্পানি ও ইস্যু ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজোশ করে অতিমূল্যায়িত দর প্রস্তাব করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে তাদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর একটিরও বাজার দর কাট-অফ প্রাইসের উপরে নেই। যেখানে তাদের গড় ৬১ টাকার শেয়ার দর এখন ৪৩ টাকা নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে গড়ে শেয়ার দর কমেছে ২৯ শতাংশ। যা সার্বিক শেয়ারবাজারকে নিম্ন ধারায় নিয়ে গেছে।

বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যা্ন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কোম্পানিগুলোর বেশি প্রিমিয়াম দেয় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন ২০১৫ সালে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু করে। এই পদ্ধতিতে একটি কোম্পানির শেয়ার দর কত হওয়া উচিত, তা এককভাবে নির্ধারন করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। এই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তালিকায় রয়েছে- মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার ও তাদের পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও ফান্ডের ম্যানেজার, অনুমোদিত পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড।

২০১৬ সালে চালু হওয়ার পরে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৬টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা গড়ে ৬০.৬৭ টাকা কাট-অফ প্রাইস নির্ধারন করে। তবে কোম্পানিগুলোর বর্তমানে গড় বাজার দর নেমে এসেছে ৪৩.৩০ টাকায়। যা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত দরের তুলনায় ১৭.৩৭ টাকা বা ২৮.৬৩ শতাংশ কম।

এদিকে গত ৪ বছরে বুক বিল্ডিংয়ে প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলো ইস্যু মূল্যের তুলনায় ৩ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ১টি কোম্পানিও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তারপরেও কোম্পানিগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কিন্তু একইসময়ের অভিহিত মূল্যের দুই-একটি কোম্পানি ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েও ‘বি’ ক্যটাগরিতে নেমে গেছে।

কারসাজির মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত করার কারনে বাজার দর নিচে নেমে এসেছে। এই কারসাজিতে কোম্পানির পক্ষে সরাসরি ভূমিকা রাখে ইস্যু ম্যানেজার। যোগ্য বিনিয়োগকারীদেরকে উপহার, বিডিংয়ের টাকা প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দর অতিমূল্যায়িত করা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছে ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। যা বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়েও এ নিয়ে আলোচনা আছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কমিশন কখনোই শেয়ার দর নির্ধারন করেনি। তারপরেও আগে প্রিমিয়াম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো। অথচ এখন সেই সমালোচনাকারীরাই কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়ন করছে। যার ফলে ওইসব কোম্পানির শেয়ার দর তাদের মূল্যায়িত কাট-অফ প্রাইসের নিচে চলে এসেছে।

যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত ৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির বা ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এখন কাট-অফ প্রাইসের নিচে লেনদেন হচ্ছে। আর ১টি কোম্পানির শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসে রয়েছে।

যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে এএএ ফাইন্যান্সের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা বসুন্ধরা পেপার মিলস। এ কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪৫.৬৩ শতাংশ। এরপরে ৪৪ শতাংশ কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আসা আমান কটন ফাইব্রার্স। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের শেয়ার দর কমেছে ৪২.২২ শতাংশ। এ কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ি অনেক কোম্পানির যথার্থ দর নির্ধারন হয় না। অনেকে এই পদ্ধতিটি অপব্যবহারের মাধ্যমে কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত করছে। যে কারনে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক।

নিম্নে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত শেয়ার দর ও ২২ আগস্টের বাজার দর তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামকাট-অফ প্রাইস (টাকা)বাজার দর (টাকা)দর হ্রাস-বৃদ্ধি
বসুন্ধরা পেপার মিলস৮০৪৩.৫০(৪৫.৬৩%)
আমান কটন ফাইব্রাস৪০২২.৪০(৪৪%)
এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট৪৫২৬(৪২.২২%)
রানার অটোমোবাইলস৭৫৫০.৮০(৩২.২৭%)
একমি ল্যাবরেটরিজ৮৫৭৮.১০(৮.১২%)
আমরা নেটওয়ার্ক৩৯৩৯০০
গড়৬০.৬৭৪৩.৩০ টাকা(২৮.৬৩%)

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যাদেরকে ইলিজিবল বা যোগ্য বিনিয়োগকারী বলা হচ্ছে, এরা আসলে যোগ্য না। বিডিংয়ে এরা পাতানো ম্যাচ খেলে। তাই সবার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারী খুজে বের করতে হবে।

দেখা গেছে, বুক বিল্ডিংয়ের কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় গড়ে ২.৮০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেখানে ১টি কোম্পানির পর্ষদও ইস্যু মূল্যের তুলনায় ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তারপরেও সবগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকবে।

অপরদিকে একইসময়ে ফিক্সড প্রাইস মেথডে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ইস্যু মূল্যের তুলনায় গড়ে ১৩.২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে সী পার্ল ও ইয়াকিন পলিমার সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা বুক বিল্ডিংয়ের যে কোন কোম্পানির তুলনায় বেশি। তারপরেও এ কোম্পানি দুটি ‘এ’ ক্যাটাগরির নিচের সারি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) চিত্র-

কোম্পানির নামকাট-অফ প্রাইসঅভিহিত মূল্যে লভ্যাংশকাট-অফ প্রাইসে লভ্যাংশ
বসুন্ধরা পেপার মিলস৮০১৫%১.৮৮%
রানার অটোমোবাইলস৭৫১৫%২%
আমান কটন৪০১০%২.৫০%
আমরা নেটওয়ার্কস৩৯১২%৩.০৮%
এসকোয়্যার নিট৪৫১৫%৩.৩৩%
একমি ল্যাবরেটরিজ৮৫৩৫%৪.১২%
গড়৬০.৬৭১৭%২.৮০%

বসুন্ধরা পেপার প্রতিটি শেয়ার ৮০ টাকা দরে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করেছে। এই কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় অভিহিত মূল্য বিবেচনায় (১০ টাকা) ১৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১.৫০ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় ১.৮৮ শতাংশ। তারপরেও কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ