পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার তহবিলের আকার ও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা ও এর মেয়াদ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখ হতে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আগমন করেন এবং এসময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিএসইসি’র মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাঈদ কুতুব, যুগ্মসচিব কামরুল হক মারুফ, উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিনসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা এবং বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মুঃ মোহসিন চৌধুরী, মোঃ আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালকরা ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ”বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকা ও কার্যাবলি’ ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং কৌশল’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রেজেন্টেশনে বিএসইসির ভিশন ও মিশন, মূল ক্রিয়াকলাপ, বিদ্যমান কাঠামো ও লোকবল, দেশের পুঁজিবাজার ও তার সার্বিক পরিকাঠামো এবং কমিশন বিভিন্ন ডিভিশন ভিত্তিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, দক্ষিণ পূর্বে এশিয়ার অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের সাথে দেশের বাজারের তুলনামূলক চিত্র, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বিএসইসি’র স্ট্র্যাটেজিসমূহ এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং তার সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এছাড়াও বৈঠকে পুঁজিবাজারে বিদ্যমান নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারি মালিকানাধীন ভালো কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি এবং প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক বিনিয়োগ সীমার অতিরিক্ত হিসেবে বিশেষ তহবিল ২০০ টাকা হতে ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীতকরণ ও উহার মেয়াদ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখ হতে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য সহায়তা প্রদানসহ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জোরালো ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বৈঠকে নাজমা মোবারক বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের যোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় পুঁজিবাজারের বিভিন্ন পলিসি সংক্রান্ত বিষয়ে এবং বাজারে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে একসাথে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকট নিরসনে এবং পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি। এসময় তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য দেশের পুঁজিবাজারের বিকাশ ও উন্নয়ন করতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থা ও নীতিমালা দরকার বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের উদ্যোগী মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মুঃ মোহসিন চৌধুরী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিএসইসি’র কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার রয়েছে।
তিনি দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলেন।
এছাড়া সাঈদ কুতুব বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সবধরণের সহায়তা করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পুঁজিবাজারে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান এবং সকল ধরণের অনিয়ম রোধে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন।