পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি ও ঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উপর নতুন শর্ত আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কোনো বেসরকারি অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করলে সেই কোম্পানিকে এক বছরের মধ্যে অবশ্যই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
তবে ওই প্রকল্পের পরিশোধিত মূলধনের পাঁচ শতাংশের বেশি প্রথম বছরে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আসতেই হবে- এমন শর্তেই অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
ব্যাংকের বিনিয়োগে গুণগত মান বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি এবং ঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৬ মে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো প্রকল্প বা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই সাকুর্লার অনুযায়ী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদিত স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল বা সমজাতীয় কোনো তহবিলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো, পর্যটন ও ডিজিটাল অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সংগ্রহ করতে চাইলে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক।
তবে এসব অ-তালিকাভুক্ত অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাংক বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়ছে। কারণ ব্যাংকের তহবিল আটকে থাকছে এবং সেখান থেকে সহজেই বের হতে পারে না।
তাই এখন থেকে বেসরকারি খাতের কোনো অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাংক বিনিয়োগ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগের তারিখ থেকে ১ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেসরকারি খাতের এ ধরনের কোনো প্রকল্পে ব্যাংক যদি বিনিয়োগ করে, তাহলে এক বছরের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করাতে হবে এবং বিনিয়োগের শুরুতে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। যদি ১ বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত না হয় তাহলে বিনিয়োগ তুলে নিতে হবে।”
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে। ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আসবে।”
নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে
** কোনো ব্যাংক কর্তৃক এরূপ ‘ইকুইটি এক্সপোজার’ গ্রহণ করার পূর্বে প্রথম সাবস্ক্রিপশনের তারিখ হতে এক বছর সময়ের মধ্যে বর্ণিত কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বিনিয়োগকারী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে অপরিবর্তনীয় সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো কর্তৃক এরূপ ‘ইকুইটি এক্সপোজার’ গৃহীত হয়ে থাকলে এই নির্দেশনা জারির ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
** ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তি সম্পাদন করতে হবে এবং শেয়ার প্রতি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যে মূল্যে ওই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ সম্পাদন করেছে তার গড় মূল্যের কম ধার্য করা যাবে না।
** সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশের বেশি প্রথম বছরে তালিকাভুক্ত করা যাবে না।
** এরূপ কোন প্রকল্প বা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিপরীতে আউটস্ট্যান্ডিং কনভারটেবল বন্ড থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট বন্ডের ইনডেনচার-এ ভিন্নরূপ কিছু না থাকলে তালিকাভুক্তির মূল্যে কনভারশন সম্পন্ন করার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে বন্ডের বিপরীতে থাকা সিনকিং ফান্ড এর আনুপাতিক অংশ (অর্থাৎ শেয়ারে রূপান্তরিত অংশের বিপরীতে থাকা আনুপাতিক অংশ) ওই প্রকল্প বা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোম্পানি অবশিষ্ট বন্ডের (যদি থাকে) মেয়াদপূর্তির পূর্বেই নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।
** এরূপ কোনো প্রকল্প বা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের নিরাপত্তার জন্য অ-তালিকাভুক্ত থাকাকালীন গঠিত কোনো বিশেষ তহবিল (সিনকিং ফান্ড বা অন্য যে কোনো নামে হোক না কেন) সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার পর্ষদের অনুমোদনক্রমে শুধু নগদ লভ্যাংশ প্রদান বা তফসিলি ব্যাংকের সাথে থাকা দায় পরিশোধ করার কাজে ব্যবহার করতে পারবে।