নেই বিদ্যুৎ, তাই অপারেশন থিয়েটারেও জ্বলছে না লাইট। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়েই গর্ভবতী নারীর অস্ত্রোপচার করে সন্তান ভূমিষ্ঠ করার চেষ্টা করলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আলোর অভাবে সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার হলো না, যার পরিণতিও হলো ভয়ঙ্কর। গর্ভে থাকা শিশুর তো মৃত্যু হলোই, বাঁচানো গেলো না মাকেও।
দুঃখজনক এই ঘটনা কোনো প্রত্যন্ত গ্রামের হলেও এক কথা হতো। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বায়ের বৃহন্মুম্বই পৌরসভার (বিএমসি) সুষমা স্বরাজ মেটারনিটি হোমে। এই পৌরসভার বার্ষিক বাজেট ৫২ হাজার কোটি রুপি। অথচ সেটির একটি হাসপাতালের বেহাল দশা ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যু হলো মা-শিশুর।
জানা গেছে, ২৯ এপ্রিল ভোরে প্রসব যন্ত্রণা ওঠে খুসরুদ্দিন আনসারি নামক শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্ত্রী সাহিদুন আনসারির (২৬)। সকাল ৭টার দিকে ওই নারীকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যান মেটারনিটি হোমের চিকিৎসকরা।
সেদিন সকাল থেকেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল হাসপাতালটি। আবার তিন ঘণ্টা ধরে চালানো হয়নি হাসপাতালের জেনারেটরও। সেই অবস্থাতেই সাহিদুনকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করা হয় মোবাইলের লাইট জ্বেলে।
কিন্তু ঘণ্টাখানেক বাদে চিকিৎসকরা জানান, প্রসবের সময় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মা-ও মারা গেছেন। এই খবর পেতেই হাসপাতালের বাইরে প্রতিবাদ শুরু করেন সাহিদুনের পরিবারের সদস্যরা।
সাহিদুনের শাশুড়ি জানান, হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় আমার পুত্রবধূ সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। সোমবার সকাল ৭টায় তাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন তাকে ওটিতেই রেখে দেওয়া হয়। রাত ৮টার দিকে জানানো হয়, প্রসবের সময় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে যুবতীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা গিয়ে দেখেন, সাহিদুনের সারা শরীর রক্তে ভেজা। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ, তাদের অনুমতি ছাড়াই সি-সেকশন করতে শুরু করেছিলেন চিকিৎসকরা। শুধু ওই নারীর নয়, আরও এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয় মোবাইলের আলো জ্বেলে। প্রমাণ হিসেবে বিএমসির কাছে ছবি ও ভিডিও পেশ করেছেন তারা। এরপরই বিএমসির পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএমসির নির্বাহী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দক্ষিণ শাহ স্বীকার করেছেন যে, হাসপাতালটিতে জেনারেটরের সমস্যা ছিল।
বিএমসির সাবেক বিজেপি কাউন্সিলর জাগৃতি পাতিল বলেন, ওই হাসপাতালের অবস্থা আসলেই খারাপ। এর আগেও এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া